শনিবার, ৯ জুলাই, ২০১১

সাতজন মেয়ের


প্রকৃতির নিয়মে সন্তান ধারণের কথা নারীদেরই। কিন্তু এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় এক পুরুষের পেটে পাওয়া গেছে এক ‘সন্তান’-এর খোঁজ। আবদুল মালেক (৪০) নামের ওই ব্যক্তির পেটে শিশুসন্তানটি জীবিত আছে, তবে পরীক্ষায় শিশুর হাত-পা, চোখ ও মেরুদণ্ড দেখা গেছে। মাথা পুরোটা নেই, এক পাশ দেখা যায়। বগুড়ার
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সকেরা আজ বুধবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
চিকিত্সকেরা বলছেন, এটি কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। প্রতি পাঁচ লাখে এমন একজন রোগী পাওয়া যায়। চিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘ফিটাস ইন ফিটু’। ‘ফিটাস’ মানে একটি বাচ্চার সঙ্গে আরেকটি বাচ্চা। একটি ভ্রূণ আরেকজনের শরীরের মধ্যে ঢুকে গেছে। সোজা কথায়, মালেক যখন মায়ের গর্ভে ছিলেন, তখন যমজ বাচ্চা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য বাচ্চাটি মালেকের পেটে চলে গেছে।
চিকিত্সকেরা জানান, বিশ্বে এ ধরনের ৯০ জন রোগীর সন্ধান মিলেছে। অনলাইন তথ্যকোষ উইকিপিডিয়া ও ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ১৯৯৯ সালে ভারতের নাগপুরে সঞ্জু ভগত নামে ৩৬ বছর বয়সী এমন এক রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, যিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর যমজকে নিজের পেটে বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। ভারতের সঞ্জু ভগতের সঙ্গে শিবগঞ্জের মালেকের বেশ মিল রয়েছে বলে ওই চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মালেকের বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের মিরাপুর গ্রামে। গত ২৮ এপ্রিল তিনি পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। তাঁর পেট প্রসূতি নারীদের মতো ফোলা। হাসপাতালে ভর্তির পর টিউমার ভেবে চিকিত্সকেরা তাঁর আলট্রাসনোগ্রাম করেন। তেমন কিছু না পেয়ে অন্য এক পরীক্ষায় দেখা যায়, মালেকের পেটের মধ্যে পাকস্থলির পেছনে শিশুর অস্তিত্ব। তবে শিশুটি অপরিপক্ব।
আবদুল মালেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা চার ভাই, এক বোন। তিনি ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই তাঁর পেট সামান্য বড় ছিল। তখন থেকেই কাজকর্ম করতে গেলে কিছু সমস্যা হতো। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পেট ফুলতে থাকে। তাই তিনি কাজ করতে পারতেন না। পেটে প্রচণ্ড জ্বালা-যন্ত্রণা হতো। অনেকবার গ্রামের চিকিত্সকদের কাছে গেছেন। সবাই ব্যথার ওষুধ দেন। এবার ব্যথা বেশি হওয়ায় এখানে এসেছেন।
মালেকের মামা মিরাপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, ছোটবেলা থেকেই মালেককে দেখে আসছেন। বছর বিশেক আগে তাঁর পেটের এক পাশ শক্ত ছিল, অন্য পাশ ছিল নরম। ধীরে ধীরে পুরো পেট শক্ত ও বড় হয়ে যায়। বছর পাঁচেক আগে বিয়েও করেছিলেন তিনি। তবে মালেকের মানসিক সমস্যার কারণে দাম্পত্য জীবন দুই বছরের বেশি টেকেনি।
হাসপাতালের গ্রন্থাগার কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শজিমেকের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ কে এম মাসুদুর রহমান জানান, মালেক মানসিক প্রতিবন্ধী। তাঁর শরীর থেকেই ভেতরের শিশুটি খাবার পাচ্ছে। যে কারণে তিনি পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদুর রহমান জানান, মালেককে সুস্থ করে তুলতে হলে অপরিপুষ্ট শিশুটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করতে হবে। তাঁর জানামতে, বছর কয়েক আগে ঢাকায় এমন একজন রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।

1 টি মন্তব্য: